শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯

স্মৃতির পাতা-২ : ভর্তি পরীক্ষা, রিয়াদ ভাই এবং তার পরিবার


স্মৃতির পাতা-২ : ভর্তি পরীক্ষা, রিয়াদ ভাই এবং তার পরিবার
২০১৩ সাল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ আব্দুর রব হলের ৩২১ নম্বর রুম। এখানে তরিকুল ইসলাম আপন ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে থাকার কিছুদিন পর আমার ভর্তি পরীক্ষা ছিল ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ভাই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। তার বন্ধু রিয়াদ ভাই; অত্যন্ত ভদ্র এবং বিনয়ী একজন মানুষ। তার বাসা ময়মনসিংহের ত্রিশালে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ দূরে। রিয়াদ ভাইয়ের বাবার সাথে কথা হয়েছিল। অত্যন্ত অমায়িক একজন মানুষ। সব সময় 'আপনি' সম্বোধনে কথা বলেন। ময়মনসিংহে যাওয়ার বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই প্রতিদিন তিনি আমার খোঁজ-খবর নিতেন। পরীক্ষার তারিখ যখন কাছাকাছি আসলো তখন রওয়ানা দিলাম টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে। আমার মেজো ভাই তখন পড়তেন বঙ্গবন্ধু সরকারি টেক্সটাইল কলেজে। যেহেতু রিয়াদ ভাইয়ের বাসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ দূরে তাই আমার ভাই আমাকে তার কলেজের এক বড় ভাইয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন যেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আমার থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এই বড় ভাইয়ের বাসা ছিল ময়মনসিংহ শহরে। সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি আমাকে ত্রিশালের বাসে তুলে দিলেন এবং ত্রিশালের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভাইয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। ত্রিশাল পৌঁছানোর পর নজরুল ভার্সিটির ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি অবস্থান জানালেন এবং সেখানে যেতে বললেন। আমি ঠিক ঠাক সেখানে পৌঁছলাম, তাকে ফোন করলাম এবং অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি ঠিক তার মেসের সামনেই দাঁড়িয়ে রইলাম আধাঘন্টা প্রায়। তারপর তিনি গরম মেজাজে বের হয়ে এলেন এবং আমাকে তার মেসে নিয়ে গেলেন। ৫ মিনিট পর তিনি আমাকে তার রুমে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি সংগঠনের সাথী কি না! আমি জবাবে 'না' বললাম। এরপর তিনি কোথায় যেন ফোন করলেন এবং চরম বাক-বিতন্ডা করলেন। তিনি ফোনে বললেন যে, সংগঠনের 'সাথী' ছাড়া তার কাছে সাধারণ পরীক্ষার্থীকে কেন পাঠানো হয়েছে। এরপর তিনি আর এক মিনিটের জন্যও অপেক্ষা করলেন না। আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন এবং একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে লোকেশনটা বলে দিলেন। নতুন একজনের ফোন নম্বর দিলেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করে সেখানে যেতে বললেন। নতুন জায়গায় পৌছে দেখলাম- এটা অগ্নিবীণা কোচিং সেন্টারের ছাত্রাবাস। এখানে যারা ছিল তারা সকলেই ভর্তি পরীক্ষার্থী। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। 
পরদিন গিয়েছিলাম রিয়াদ ভাইয়ের বাসায় দেখা করতে। রিয়াদ ভাই তখন বাসায় ছিলেন না, ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। রিয়াদ ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার পরে যা দেখেছিলাম তা হচ্ছে একটা অসাধারণ পরিবার। যে পরিবারের প্রত্যেকেই সুশিক্ষিত, ভদ্র, বিনয়ী এবং অতিথিপরায়ণ। ছোট ভাই শাহিন তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। রাকিব কুয়েটে চান্স পেয়ে ভর্তি হতে গিয়েছিল। তাই তার সাথে দেখা হয়নি কিন্তু ফোনে কথা হয়েছিল। খালা আমাকে পরম স্নেহ করেছিলেন। পরদিন যখন চলে আসব তখন খালা আমার হাতে ১০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলেছিলেন, "ভর্তি পরীক্ষার জন্য বাইরে বাইরে কষ্ট করছো, কিছু মিষ্টি মিঠাই খেয়ে নিও!"😍😍
নোটটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। কারণ, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেও তখন পর্যন্ত সম্ভবত এমন উপহার আমি পাইনি। দু বছর পর যখন অন্যায় ভাবে আমাকে কারাবন্দি করা হলো, তার তিন মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যখন মেসে ফিরে এলাম- প্রথমেই চেক করলাম আমার প্রিয় উপহারটা আছে কি না। দেখলাম- কোথাও নেই😭😭! আমার জীবনের সেরা উপহারগুলো হারিয়েছি ২০১২-২০১৩ এবং ২০১৫ সালের কারাবন্দি সময়গুলোতে😭😭
কাজী নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই ফিরে এসেছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কারণ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হরতাল-অবরোধের জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল।

অন্যায়ের প্রতিবাদ


Islamul Haque
April 27, 2019


অন্যায়ের প্রতিবাদ হতে পারে সরবে অথবা নীরবে; ভদ্রতার সহিত অথবা অভদ্রভাবে। সরব প্রতিবাদের জন্য একটা সামর্থ্য বা সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। এ সক্ষমতা যাদের থাকে না তাদের জন্য নীরব প্রতিবাদের পথ বেছে নেয়াই ভালো। এরমধ্যে আবার প্রতিবাদের দুইটা মাধ্যম রয়েছে। প্রতিবাদ করা যায় ভদ্রভাবে, আবার প্রতিবাদ করা যায় অভদ্রভাবেও; যা ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। আমার সক্ষমতা নেই সরবে প্রতিবাদ করার। তাইতো নীরব প্রতিবাদের পথ ধরেছি এবং প্রতিবাদটা হবে ভদ্রভাবে। কেউ কেউ হয়তো আমাকে জিজ্ঞেস করবেন যে, আমি কার অন্যায়ের প্রতিবাদে এসব লিখছি? নামটা শোনার পর তারাই বলবেন যে, আগে তার মত হয়ে দেখাও (ইতোমধ্যে দু-একজন এমন কথা বলে ফেলেছেন)! অন্যায়; সে তো সর্বদা অন্যায়ই। ভালো কাজ; সে তো সর্বদা ভালো কাজই। তাহলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে ভালো কাজের কথাগুলো টেনে এনে প্রতিবাদ থামিয়ে দেওয়া হয় কেন? আর অন্যায়টা যদি হয়ে থাকে 'হাক্কুল ইবাদ'- এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন তবে প্রতিবাদের অধিকারটা আমার থাকবে না কেন!!

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯

মজলুম, জালিম ও মুক্তির পথ


Islamul Haque
April 16, 2019;


মজলুম শ্রেণি যখন জালিমের প্রশংসা শুরু করে দেয়, তখন সে জাতির মুক্তির পথ আর অবশিষ্ট থাকে না। আপনি যখন কোন জালিমের প্রশংসা করতে শুরু করবেন আপনার ভেতর থেকে প্রতিবাদী সত্তা হারিয়ে যেতে থাকবে। গতকাল পর্যন্ত যার কর্মের ইতিহাস ছিল অত্যাচারের পর্বত তুল্য আজ তার একটি ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি, দু'টি দরদ দেখানো মিষ্টি কথায় আপনি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন যখন ঠিক একই সময়ে আপনার ভাইয়ের 'পরেই ওই অত্যাচারীর পক্ষ থেকে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অত্যাচারের বিষাক্ত বাণ। আপনি তার প্রশংসা করছেন, তার বিশাল অত্যাচারের ইতিহাস ভুলে যাচ্ছেন। আর সে চিন্তা করছে আপনাকে নিঃশেষ করার। এভাবে জালিম দ্বারা মজলুম নিপিড়নের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। সুতরাং প্রশংসা করার আগে আমাদের অন্তত একবার চিন্তা করা উচিত- আমরা কার প্রশংসা করছি! (মজলুম হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি)

ব্যর্থতার গল্পগুলো


Islamul Haque
April 01, 2019; 10:21pm


ব্যর্থতার মধ্যে ডুবে থেকে ব্যর্থতার গল্প বলা নিতান্তই হাস্যকর। তা যেমন শ্রোতাদের জন্য বিরক্তির কারণ হয় তেমনি অনেকের কাছে হয়ে ওঠে উপহাসের বিষয়ও। সাফল্যের সোপানে চড়ে ঠিক এই গল্পগুলোই যখন বলা হয় তখন সেগুলো হয়ে ওঠে সকলের আগ্রহের বিষয়। তখন ব্যর্থতার গল্পগুলো শুনে শ্রোতাদের হৃদয় কোমল হয়। সকলে বলে ওঠেন, "আহ্........(আরও কতক অজানা স্বগতোক্তি)!"

ধন্যবাদ


Islamul Haque
March 19, 2019


কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ পেয়ে কেউ কোন দিন ছোট হয়েছে কি না আমি জানি না। তেমনি ধন্যবাদ দিয়ে কেউ কাউকে ছোট করতে পেরেছে কি না তাও জানি না আমি। তবুও অনেক অনুষ্ঠানেই একথা বলতে শুনেছি যে, ধন্যবাদ দিয়ে কাউকে ছোট করতে চাই না। এই কথার আবিষ্কারক কে ছিলেন জানি না। তবে যেই হোন না কেন, তিনি হয়তো ভেবেছিলেন ধন্যবাদ শব্দের অর্থ প্রতিদান। কিন্তু 'ধন্যবাদ' শব্দের অর্থ 'প্রতিদান' কখনই নয়। ধন্যবাদ শব্দটি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক। সহযোগিতা যে কোন ধরনের বা যে কোন আকারেরই হোক না কেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতার শুরুটা ধন্যবাদ দিয়েই হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়। ধন্যবাদ দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা শেষ হয়ে গেল। ধন্যবাদ দেওয়ার অর্থ এও নয় যে, কারও সহযোগিতার জন্য তার প্রতিদান চুকিয়ে দেওয়া হল। বরং ধন্যবাদ এমন একটি শব্দ যা আমাদের কৃতজ্ঞতা বোধকে বাড়িয়ে দেয়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সবচেয়ে উপযুক্ত ও মার্জিত শব্দ 'ধন্যবাদ' (আমার মতে)। তাই 'যারা অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না'- এমনটি বলা নিতান্তই হাস্যকর বলে মনে হয়।

স্মৃতির পাতা-১ : বড় ভাই




স্মৃতির পাতা-১ : বড় ভাই
2013 সালের সেপ্টেম্বর মাস। তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ওই মাসের শেষ দিকে গিয়েছিলাম দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। সেখানে কাউকে চিনতাম না। পূর্ব পরিচিত কেউ ছিল না। সেখানে যাবার পর কোথায় গিয়ে উঠব এ ব্যাপারে একটু চিন্তিত ছিলাম। তারপর কোন এক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের রেফারেন্সে ওই সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল এর সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। সেখানে যাবার পর যে আচরণটা পেয়েছিলাম সেটা ভোলার নয়। তারপর যশোরের এক ভাইয়ের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তার রুমে গিয়ে উঠেছিলাম। পরিচয় হবার পর জেনেছিলাম সে আমারই বন্ধু দেলোয়ার এবং ইমরানের কলেজের বন্ধু অভিজিৎ। অভিজিৎ ভাইয়ের বাসা যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায়।
এরপর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কখনো কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন কিংবা নেতার রেফারেন্সে কোথাও যাব না। তার কয়েকদিন পরেই গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। ওখানেও কাউকে চিনতাম না। আগে থেকে কারো সাথে পরিচয় ছিল না। বাসে যেতে যেতে পরিচয় হয়েছিল GM Sayed Kobir Jony'র সাথে। জনিও আমার মতোই পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। ফোনে এক বড় ভাইয়ের সাথে ওর কথা হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে ওখানকার কেন্দ্রীয় মসজিদে গিয়ে উঠব। কিন্তু জনি আমাকে বলেছিল,"তুমি আমার সাথেই চলো বড় ভাইয়ের ওখানে।" আমি যেতে চাইছিলাম না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পৌঁছানোর পর জনি আমাকে একরকম জোর করে সেই বড় ভাইয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। শহীদ আবদুর রব হলের 321 নম্বর রুম। দিনটি ছিল শুক্রবার। নামাজের সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই ব্যাগ রেখে তড়িঘড়ি করে বড় ভাইয়ের সাথে বের হয়ে গিয়েছিলাম সেন্ট্রাল মসজিদে যাওয়ার জন্য। মসজিদ থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া করলাম। তারপর গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে নিলাম। এত কিছুর মধ্যে পরিচয়টা ভালোমতো হয়ে ওঠেনি। ঘুম থেকে ওঠার পর বড় ভাইদের সাথে পরিচিত হলাম।
এখানে কিছুদিন থাকার পর আমার ভর্তি পরীক্ষা ছিল ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ভাই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন তার বন্ধু রিয়াদ ভাইয়ের বাসায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে। সেসব ঘটনা আর এক দিন বলব। 
ঐ সময়টাতে সারাদেশে হরতাল অবরোধ চলছিল। মাঝে মাঝে শুক্রবারেও অবরোধ থাকতো । আমি ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছয়টা ইউনিটে registration করেছিলাম। প্রতি শুক্রবারে পরীক্ষা থাকতো। যে শুক্রবারে অবরোধ থাকতো ওইদিনের পরীক্ষাটাও আবার পিছিয়ে যেত। এভাবে আমাকে ওখানে থাকতে হয়েছিল প্রায় তিন মাস। ভর্তি হওয়ার পর আরও এক মাস ওই বড় ভাইয়ের সাথে ছিলাম। যতদিন বড় ভাইয়ের ওখানে ছিলাম তিনি কখনোই খাবারের বিল আমাকে দিতে দেননি। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কি পরিমান পরীক্ষার্থীর আগমন ঘটে তা সকলেই জানেন। ওই সময়গুলোতে তিনি কখনোই আমাকে ফ্লোরে ঘুমাতে দেননি। তিনি সব সময় আমাকে খাটে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতেন। আমি যতদিন ছিলাম, প্রতি সপ্তাহে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট থেকে গরুর মাংস কিনে এনে রান্না করে খাওয়াতেন। যিনি আমার জন্য এত কিছু করেছেন সেই পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই-এর জন্য কিছুই করতে পারিনি আমি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি 3 বছর। এই সময়গুলোতে অনেক বড় ভাইকে পেয়েছি, তাদের মধ্যে এক ভাই বলেছিলেন, "আপনাদের সাথে আমার পরিচয় সংগঠনের মাধ্যমে, তাই যখন আমি বা আপনি সংগঠনে থাকব না, তখন আমাদের সম্পর্কও আর থাকবে না। যারা আমার বন্ধু আছেন তারা বন্ধু হিসেবে আমাকে ফোন দিতে পারেন। এছাড়া অন্য কেউ যোগাযোগ করার দরকার নেই।" ঠিকই তো। সাংগঠনিকভাবে পরিচয়, সুতরাং সংগঠন শেষ তো সম্পর্কও শেষ। আর তাইতো সে সকল বড় ভাইদের সাথে এখন যোগাযোগ নেই। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা পোষণ করার কারণে আমার মনে হয় বাংলাদেশের একটি প্রবীণ সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও তারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারেনি। দুই/তিনজন বড় ভাইয়ের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে যারা উক্ত ধ‍্যান-ধারণা পোষণ করেন না।
কিন্তু যে বড় ভাইয়ের কাছে 4 মাস ছিলাম পরম স্নেহে, তার সাথে আমার সাংগঠনিক পরিচয় নয় , বরং অপরিচিত থেকে হঠাৎ পরিচিত হয়েছিলাম- একটা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হয়েছিল। এ বন্ধন কখনো শিথিল হবার নয়। এই স্মৃতি কখনো বিস্মৃত হবার নয়। ভাইকে অনেক ভালোবাসি, অনেক শ্রদ্ধা করি। তিনি হলেন আপন ভাই, তরিকুল ইসলাম আপন।

Islamul Haque
May 8, 2018

পরামর্শ এবং উপদেশ।


Islamul Haque
January 8, 2018


আপনার পছন্দ বা অপছন্দের উপর ভিত্তি করে অপরকে বিশ্লেষণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত? আপনার পছন্দ বা অপছন্দগুলোকে অপরের উপর ছুড়ে মারাই বা কতখানি যুক্তিযুক্ত! অপরের আদর্শ, হেয়ার স্টাইল, দাড়ির স্টাইল, পোশাক পরিচ্ছদ- যা অশালীন নয় এবং আপনার কোন ক্ষতি করছে না, শুধুমাত্র আপনার অপছন্দ হওয়ায় তাকে আপনার পছন্দের অনুকূলে আনতে বারে বারে উপদেশ দেওয়া কি খুব জরুরি? তাকে যে বারে বারে উপদেশ দিয়ে ফেলছেন এ বিষয়টা অনুধাবন করা আপনার জন্য জরুরি নয় কি? (অপরের হেয়ার স্টাইল, দাড়ির স্টাইল আপনার পছন্দের অনুকূলে চলে আসলে তাতে খুশি হওয়ারও কিছু নেই)।
বি.দ্র.
# 'আপনার' অর্থ নিজের।
# সৌন্দর্য আপেক্ষিক।
# একটা পরামর্শ বারে বারে দিলে তা আর পরামর্শ থাকে না_উপদেশ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র দায়িত্বশীলগণ


Islamul Haque
June 20, 2017

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র দায়িত্বশীলগণ তাহাদের কন্যাদিগকে পারিবারিকভাবে ইসলাম শিক্ষা দেন না, কার্যত যে শিক্ষা দ্বারা একজন মুসলিম নিজেকে এবং পরিবারকে পরিচালনা করিতে পারে। কারণ, তাহাদের মেধাবী কন্যাদিগের কুরআন, হাদিস, বিষয়ভিত্তিক ইসলামী বই/পুস্তক অধ্যয়ন করিবার সময় কোথায়! ক্লাসের পাঠ্যপুস্তক উত্তমরূপে অধ্যয়ন করিয়া ভাল ফল অর্জন করত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আসন দখল করিতে হইবে যে! তারপর সরকারি চাকুরে শ্মশ্রুহীন সুদর্শন পুরুষকে বিবাহ করিতে হইবে, হোউক সে ভিন্ন আদর্শের অথবা সুদখোর বা ঘুষখোর- শুধু নেশাখোর না হইলেই হইবে। পুত্র যত ভাল হোউক আর যতই উপার্জন করুক শুধু শ্মশ্রু/দাড়ি থাকিলেই কন্যার যত আপত্তি।
কিন্তু, একজনমাত্র দায়িত্বশীলকে দেখিয়াছি যিনি তাহার কন্যাকে পারিবারিকভাবে পূর্ণরূপে ইসলাম শিক্ষা দিয়াছেন। তাহার কন্যা শিক্ষা-বিভাগের সকল স্তরে বৃত্তি পাইয়াছে, যথারীতি সরকারি মেডিকেল কলেজেও অধ্যয়ন করিতেছে। কৈ, ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার কারণে তাহার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে কোনরূপ সমস্যা তো হইতে দেখা যায় নাই!!
এরূপ মনোবৃত্তি সাধারণ পরিবারের কন্যাদের মধ্যে সচরাচর পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র দায়িত্বশীলগণের কন্যাদিগের মধ্যে এরূপ মনোবৃত্তি প্রকট আকার ধারণ করিবার জন্য এই সকল দায়িত্বশীল পিতা-মাতা সম্পূর্ণরূপে দায়ী।
সুতরাং যে সকল দায়িত্বশীল দ্বারা নিজ পরিবারে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয় না, তাহাদের দ্বারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা মানায় না, তাহা আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যাহা বাস্তব সম্মত নয়, শারীয়াহ্ সম্মতও নয়।
//আমার প্রশ্নে ইসলাম বিরোধীদের তৃপ্তি পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, গণতন্ত্রের জন্য এরদোগানের সমালোচনা করতে পারি কিন্তু মুশরিক কামাল পাশার পক্ষে যেতে পারি না। তদ্রূপ, গণতন্ত্রের জন্য ড. মুরসি'র সমালোচনা করতে পারি কিন্তু মুশরিক সিসি'র পক্ষাবলম্বন করতে পারি না।

বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র চুরির ধরণ ও প্রকরণ

১৯৭৭ সালে 'বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি' প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহ...