মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯

স্মৃতির পাতা-১ : বড় ভাই




স্মৃতির পাতা-১ : বড় ভাই
2013 সালের সেপ্টেম্বর মাস। তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ওই মাসের শেষ দিকে গিয়েছিলাম দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। সেখানে কাউকে চিনতাম না। পূর্ব পরিচিত কেউ ছিল না। সেখানে যাবার পর কোথায় গিয়ে উঠব এ ব্যাপারে একটু চিন্তিত ছিলাম। তারপর কোন এক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের রেফারেন্সে ওই সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল এর সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। সেখানে যাবার পর যে আচরণটা পেয়েছিলাম সেটা ভোলার নয়। তারপর যশোরের এক ভাইয়ের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তার রুমে গিয়ে উঠেছিলাম। পরিচয় হবার পর জেনেছিলাম সে আমারই বন্ধু দেলোয়ার এবং ইমরানের কলেজের বন্ধু অভিজিৎ। অভিজিৎ ভাইয়ের বাসা যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায়।
এরপর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কখনো কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন কিংবা নেতার রেফারেন্সে কোথাও যাব না। তার কয়েকদিন পরেই গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। ওখানেও কাউকে চিনতাম না। আগে থেকে কারো সাথে পরিচয় ছিল না। বাসে যেতে যেতে পরিচয় হয়েছিল GM Sayed Kobir Jony'র সাথে। জনিও আমার মতোই পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। ফোনে এক বড় ভাইয়ের সাথে ওর কথা হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে ওখানকার কেন্দ্রীয় মসজিদে গিয়ে উঠব। কিন্তু জনি আমাকে বলেছিল,"তুমি আমার সাথেই চলো বড় ভাইয়ের ওখানে।" আমি যেতে চাইছিলাম না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পৌঁছানোর পর জনি আমাকে একরকম জোর করে সেই বড় ভাইয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। শহীদ আবদুর রব হলের 321 নম্বর রুম। দিনটি ছিল শুক্রবার। নামাজের সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই ব্যাগ রেখে তড়িঘড়ি করে বড় ভাইয়ের সাথে বের হয়ে গিয়েছিলাম সেন্ট্রাল মসজিদে যাওয়ার জন্য। মসজিদ থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া করলাম। তারপর গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে নিলাম। এত কিছুর মধ্যে পরিচয়টা ভালোমতো হয়ে ওঠেনি। ঘুম থেকে ওঠার পর বড় ভাইদের সাথে পরিচিত হলাম।
এখানে কিছুদিন থাকার পর আমার ভর্তি পরীক্ষা ছিল ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ভাই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন তার বন্ধু রিয়াদ ভাইয়ের বাসায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে। সেসব ঘটনা আর এক দিন বলব। 
ঐ সময়টাতে সারাদেশে হরতাল অবরোধ চলছিল। মাঝে মাঝে শুক্রবারেও অবরোধ থাকতো । আমি ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছয়টা ইউনিটে registration করেছিলাম। প্রতি শুক্রবারে পরীক্ষা থাকতো। যে শুক্রবারে অবরোধ থাকতো ওইদিনের পরীক্ষাটাও আবার পিছিয়ে যেত। এভাবে আমাকে ওখানে থাকতে হয়েছিল প্রায় তিন মাস। ভর্তি হওয়ার পর আরও এক মাস ওই বড় ভাইয়ের সাথে ছিলাম। যতদিন বড় ভাইয়ের ওখানে ছিলাম তিনি কখনোই খাবারের বিল আমাকে দিতে দেননি। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কি পরিমান পরীক্ষার্থীর আগমন ঘটে তা সকলেই জানেন। ওই সময়গুলোতে তিনি কখনোই আমাকে ফ্লোরে ঘুমাতে দেননি। তিনি সব সময় আমাকে খাটে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতেন। আমি যতদিন ছিলাম, প্রতি সপ্তাহে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট থেকে গরুর মাংস কিনে এনে রান্না করে খাওয়াতেন। যিনি আমার জন্য এত কিছু করেছেন সেই পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই-এর জন্য কিছুই করতে পারিনি আমি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি 3 বছর। এই সময়গুলোতে অনেক বড় ভাইকে পেয়েছি, তাদের মধ্যে এক ভাই বলেছিলেন, "আপনাদের সাথে আমার পরিচয় সংগঠনের মাধ্যমে, তাই যখন আমি বা আপনি সংগঠনে থাকব না, তখন আমাদের সম্পর্কও আর থাকবে না। যারা আমার বন্ধু আছেন তারা বন্ধু হিসেবে আমাকে ফোন দিতে পারেন। এছাড়া অন্য কেউ যোগাযোগ করার দরকার নেই।" ঠিকই তো। সাংগঠনিকভাবে পরিচয়, সুতরাং সংগঠন শেষ তো সম্পর্কও শেষ। আর তাইতো সে সকল বড় ভাইদের সাথে এখন যোগাযোগ নেই। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা পোষণ করার কারণে আমার মনে হয় বাংলাদেশের একটি প্রবীণ সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও তারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারেনি। দুই/তিনজন বড় ভাইয়ের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে যারা উক্ত ধ‍্যান-ধারণা পোষণ করেন না।
কিন্তু যে বড় ভাইয়ের কাছে 4 মাস ছিলাম পরম স্নেহে, তার সাথে আমার সাংগঠনিক পরিচয় নয় , বরং অপরিচিত থেকে হঠাৎ পরিচিত হয়েছিলাম- একটা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হয়েছিল। এ বন্ধন কখনো শিথিল হবার নয়। এই স্মৃতি কখনো বিস্মৃত হবার নয়। ভাইকে অনেক ভালোবাসি, অনেক শ্রদ্ধা করি। তিনি হলেন আপন ভাই, তরিকুল ইসলাম আপন।

Islamul Haque
May 8, 2018

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র চুরির ধরণ ও প্রকরণ

১৯৭৭ সালে 'বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি' প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহ...