স্মৃতির পাতা-২ : ভর্তি পরীক্ষা, রিয়াদ ভাই এবং তার পরিবার
২০১৩ সাল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ আব্দুর রব হলের ৩২১ নম্বর রুম। এখানে তরিকুল ইসলাম আপন ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে থাকার কিছুদিন পর আমার ভর্তি পরীক্ষা ছিল ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ভাই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। তার বন্ধু রিয়াদ ভাই; অত্যন্ত ভদ্র এবং বিনয়ী একজন মানুষ। তার বাসা ময়মনসিংহের ত্রিশালে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ দূরে। রিয়াদ ভাইয়ের বাবার সাথে কথা হয়েছিল। অত্যন্ত অমায়িক একজন মানুষ। সব সময় 'আপনি' সম্বোধনে কথা বলেন। ময়মনসিংহে যাওয়ার বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই প্রতিদিন তিনি আমার খোঁজ-খবর নিতেন। পরীক্ষার তারিখ যখন কাছাকাছি আসলো তখন রওয়ানা দিলাম টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে। আমার মেজো ভাই তখন পড়তেন বঙ্গবন্ধু সরকারি টেক্সটাইল কলেজে। যেহেতু রিয়াদ ভাইয়ের বাসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ দূরে তাই আমার ভাই আমাকে তার কলেজের এক বড় ভাইয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন যেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আমার থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এই বড় ভাইয়ের বাসা ছিল ময়মনসিংহ শহরে। সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি আমাকে ত্রিশালের বাসে তুলে দিলেন এবং ত্রিশালের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভাইয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। ত্রিশাল পৌঁছানোর পর নজরুল ভার্সিটির ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি অবস্থান জানালেন এবং সেখানে যেতে বললেন। আমি ঠিক ঠাক সেখানে পৌঁছলাম, তাকে ফোন করলাম এবং অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি ঠিক তার মেসের সামনেই দাঁড়িয়ে রইলাম আধাঘন্টা প্রায়। তারপর তিনি গরম মেজাজে বের হয়ে এলেন এবং আমাকে তার মেসে নিয়ে গেলেন। ৫ মিনিট পর তিনি আমাকে তার রুমে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি সংগঠনের সাথী কি না! আমি জবাবে 'না' বললাম। এরপর তিনি কোথায় যেন ফোন করলেন এবং চরম বাক-বিতন্ডা করলেন। তিনি ফোনে বললেন যে, সংগঠনের 'সাথী' ছাড়া তার কাছে সাধারণ পরীক্ষার্থীকে কেন পাঠানো হয়েছে। এরপর তিনি আর এক মিনিটের জন্যও অপেক্ষা করলেন না। আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন এবং একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে লোকেশনটা বলে দিলেন। নতুন একজনের ফোন নম্বর দিলেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করে সেখানে যেতে বললেন। নতুন জায়গায় পৌছে দেখলাম- এটা অগ্নিবীণা কোচিং সেন্টারের ছাত্রাবাস। এখানে যারা ছিল তারা সকলেই ভর্তি পরীক্ষার্থী। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
পরদিন গিয়েছিলাম রিয়াদ ভাইয়ের বাসায় দেখা করতে। রিয়াদ ভাই তখন বাসায় ছিলেন না, ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। রিয়াদ ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার পরে যা দেখেছিলাম তা হচ্ছে একটা অসাধারণ পরিবার। যে পরিবারের প্রত্যেকেই সুশিক্ষিত, ভদ্র, বিনয়ী এবং অতিথিপরায়ণ। ছোট ভাই শাহিন তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। রাকিব কুয়েটে চান্স পেয়ে ভর্তি হতে গিয়েছিল। তাই তার সাথে দেখা হয়নি কিন্তু ফোনে কথা হয়েছিল। খালা আমাকে পরম স্নেহ করেছিলেন। পরদিন যখন চলে আসব তখন খালা আমার হাতে ১০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলেছিলেন, "ভর্তি পরীক্ষার জন্য বাইরে বাইরে কষ্ট করছো, কিছু মিষ্টি মিঠাই খেয়ে নিও!"😍😍
নোটটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। কারণ, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেও তখন পর্যন্ত সম্ভবত এমন উপহার আমি পাইনি। দু বছর পর যখন অন্যায় ভাবে আমাকে কারাবন্দি করা হলো, তার তিন মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যখন মেসে ফিরে এলাম- প্রথমেই চেক করলাম আমার প্রিয় উপহারটা আছে কি না। দেখলাম- কোথাও নেই😭😭! আমার জীবনের সেরা উপহারগুলো হারিয়েছি ২০১২-২০১৩ এবং ২০১৫ সালের কারাবন্দি সময়গুলোতে😭😭।
কাজী নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই ফিরে এসেছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কারণ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হরতাল-অবরোধের জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন