সোমবার, ২ মার্চ, ২০২০

হে বোন, তোমাকে ভালোবাসি। আমার বাড়িতে তোমার জন্যে আন্তরিকতার অভাব হবে না।

আমরা যখন স্বজনদের কারও নিকটবর্তী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি, ইচ্ছাগুলো প্রকাশ করি, তখন আমাদের মাঝে প্রবল উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা কাজ করতে থাকে। আমরা সেখানে বেড়াতে গিয়ে কী কী করবো সেসব পরিকল্পনা আমাদের মাথায় ওলটপালট হতে থাকে। আর, গন্তব্য যদি হয় নানা-বাড়ি/নানি-বাড়ি, তাহলে তো কথাই নেই। উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা কাজ করে অসীম পর্যন্ত। মনে হয়, নানি-বাড়ি গিয়ে বাড়ির পাশে ফসলের ক্ষেতের আইলে বসে থেকে কাটিয়ে দিবো আধাবেলা। তারপর ধান কেটে নেওয়া শূন্য জমিতে বহুদূর পর্যন্ত হাঁটবো। ক্লান্ত হয়ে গেলে তারপর ফিরতে শুরু করবো। দূর থেকে দেখবো বাঁশ বাগানে পাখিদের কলরব, ঘরে ফেরার আনন্দ। পুকুরে ইচ্ছামত সাঁতার কাটবো। দুপুর হয়ে গেলে কেউ হয়তো এসে বলবে, "পানিতে আর ডুবোডুবি করিস না -জ্বর এসে যাবে।" তখন পানি থেকে উঠে পড়বো। দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়বো মাঠে। হয়তো একটা ছোট অথবা বড় ঘুড়ি বানিয়ে উড়াতে শুরু করব। ঘুড়িটা অনেক উপরে উঠে গেলে হয়তো মনে মনে চাইবো সুতা কেটে যাক। হয়তো একসময় ঘুড়ির সুতা কেটে যাবে। ঘুড়ির পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছে যাব মাঠের অন্য প্রান্তে। সুতো ছেড়া ঘুড়িটা হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে হয়তো চিন্তা করব ঘুড়িটা আরো দূরে গিয়ে পড়তে পারতো অথবা না ছিড়ে গেলে আরো অনেক উঁচুতে উঠতো। পরদিন আবার হয়তো পুকুরে নেমে সাঁতার কাটবো কিন্তু প্রথম দিনের মতো মজা পাবো না। তখন হয়তো কিছু কলাগাছ কেটে নিয়ে ভেলা তৈরি করে ভেসে বেড়াবো -যখন খুশি তখন। কেউ বাধা দেবে না, কেউ নিষেধ করবে না। হয়তো খাবার বেলা গড়িয়ে গেলে বলবে, "অন্তত খাওয়া-দাওয়া শেষ কর, তারপর নাহয় পানিতে ভাসিস।" বিকালে হয়তো আবার ঘুড়ি উড়াবো। পরদিন হয়তো আম গাছে ঢিল মেরে আমের গুটি পেড়ে লবণ মরিচ দিয়ে খাবো। হয়তো নারকেল গাছে উঠে ডাব পাড়বো। আনন্দের আতিশয্যে হয়তো কেটে ফেলবো কয়েক কাঁদি ডাব। কেউ নিষেধ করবে না, কেউ বকা দেবে না। নানা হয়তো বলবেন, "এত কষ্ট করতে গেলি কেন? পাশের বাড়ির কাউকে ডাকলেই সে এসে পেড়ে দিয়ে যেত।"

(এই স্মৃতিগুলো আমার নিজস্ব নয়। এগুলো আমার ছোট্ট বেলায় দেখা অন্যের স্মৃতি। ছোট্ট মনে কেবলই ভাবতাম যদি আমার বেলায় এমনটা হতো! ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে অন্য কেউ হয়তো গম বা মসূরীর ক্ষেত পায়ে মাড়িয়েছে। এর দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে আমার ভাই অথবা আমি। এটাই আমার স্মৃতি। কলাগাছের ভেলা বানিয়ে সকলকে পানিতে ভাসার আনন্দ দিয়েছি। কলা গাছ কাটার অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছে আমার ভাই অথবা আমি। এটাই আমার স্মৃতি। সকলে মিলে ঢিল মেরে আমের গুটি পেড়ে লবণ-মরিচ দিয়ে খেয়েছি। আমের গুটি পাড়ার অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছি আমার ভাই এবং আমি। এটাই আমার স্মৃতি। সবাই যখন নানা-বাড়ি আসতো, নারকেল গাছে উঠে ডাব পাড়ার কাজটা হতো আমার ভাইকে দিয়ে। তাদের চাহিদা মত ডাব পেড়ে বেশি ডাব পাড়ার দায়ে অভিযুক্ত হতে হতো আমার ভাইকে। এটাই আমার স্মৃতি। ছোটবেলায় একবার কোথা থেকে কিনে আনা তুলার বস্তা থেকে নানি আমাকে একটা পুরাতন সাদা শার্ট বের করে পরিয়ে দিয়েছিলেন। নানির দেওয়া প্রথম এবং একমাত্র শার্ট। মা আমার গায়ের শার্টটা খুলে নানির সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। এটাই আমার স্মৃতি। নানি বাড়িতে যখন সকলে বেড়াতে আসে তখন ছোটরা সাধারণত তাদেরকে পেয়ে আনন্দিত হয়। তাদের সাথে থাকতে ও ঘুরতে পছন্দ করে। আমিও করতাম। একবার নানি বাড়িতে বেড়াতে আসা এক বড় আপু বলেছিলেন, "এই ছোড়া এতো মেয়েদের পিছু পিছু ঘুরে কেন?" তখন পড়তাম ক্লাস টুতে। তারপর থেকে হয়তো বড় আপুদের সাথে খুব একটা মেশা হয়নি।
মুসলিমা আপু, তামির ভাই এবং আমি। প্রায় সমবয়সী ছিলাম আমরা। (নিজেদের বাড়ি এবং নানি-বাড়ি রাস্তার এপাশ-ওপাশ হাওয়াতে নানি বাড়ির মজা তেমন পাইনি। অবশ্য নিজেদের বাড়ি যেটা, তার জমি নানার কাছ থেকে আমার বাবা কিনেছিলেন এবং রেজিস্ট্রি করা পর্যন্ত একই জমির দাম পরিশোধ করেছিলেন তিনবার 😁।) নানি বাড়িতে সবাই বেড়াতে আসলে মুসলিমা আপু এবং তামির ভাইয়ের সাথে সবচেয়ে ভালো সময় কেটেছে আমার। তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি আমি। তামির ভাই ক্লাস ফোরে। ফাইনালের আগে আমার সমাজ এবং বিজ্ঞান বই দাগিয়ে দিয়েছিলেন শর্টকাটে। সেবার ফাইনালে সমাজ(৫০) ও বিজ্ঞান(৫০)-এ 97 পেয়েছিলাম আমি। ক্লাস ফাইভে একবার মুসলিমা আপু বাংলা বই দাগিয়ে দিয়েছিলেন। একটু বেশিই দাগিয়ে দিয়েছিলেন😁।)

নানা-নানি গত হয়েছেন অনেক বছর আগে। সেখানে এখন অধিষ্ঠিত হয়েছেন তার উত্তরসূরি কেউ। 
এতকিছু মাথার ভেতর ওলটপালট হওয়ার পর যখন যাত্রার আগের দিন পর্যন্ত সেখান থেকে কেউ আগ্রহ প্রকাশ না করে, আন্তরিকতা না দেখায় যদিও সকলের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা প্রকাশের ধরন এক নয়, অন্তত এই কথাটুকু বলে না যে, "তুমি সকাল সকাল রওয়ানা দিও। আরো অনেকেই আসছে।" যাদের সাথে যাবার কথা ছিল তারা ছেড়ে চলে গেছে। অথবা কারো সাথে যাবো এমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ যোগাযোগ করছে না অথবা যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তখন সেই উচ্ছ্বাস এবং উদ্দীপনা অসীম থেকে সসীমে নেমে আসে এবং একসময় অন্তরে কেন্দ্রীভূত হয়ে শূন্য হয়ে যায়। মধ্যখানে তৈরি হয় কিছু চাপা কষ্ট। মনে হয় এ নানা/নানি-বাড়ি আমার নয়, অন্য কারও। এই মামা-বাড়ি আমার নয়, অন্য কারও মামা-বাড়ি।

হে বোন, তোমার বেলায় এমনটা হয়ে থাকলে তা অনুভব করতে পারি আমি। কারণ, নানি-বাড়ির সুন্দর স্মৃতিগুলো আমার দখলে নেই যে! নানি বাড়ি পাশেই হওয়াতে কেউ সকাল সকাল রওনা দেয়ার কথা কখনো বলেনি। বড়রা তাদের দায়িত্বে অবহেলা করলে সে ত্রুটি আমি নিজের কাঁধে নিবো না। আমি শুধু বলবো, "হে বোন, আমার যখন বাড়ি হবে তখন আমার বাড়িতে এসো পরিবারের সকলকে নিয়ে। আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা(ইনশাল্লাহ হবে ) তোমাকে যথেষ্ট সমাদর করবে। আন্তরিকতার অভাব হবে না। হে বোন, তোমাকে ভালোবাসি। আমার বাড়িতে তোমার জন্যে আন্তরিকতার অভাব হবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র চুরির ধরণ ও প্রকরণ

১৯৭৭ সালে 'বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি' প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহ...