১৯৭৭ সালে 'বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি' প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯২ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ২০০৫ সালে এনজিও ব্যুরো অ্যাফেয়ার্স থেকে নিবন্ধন লাভ করে। গঠনতান্ত্রিকভাবে এটি অরাজনৈতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদিত হলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর যাবতীয় কার্যক্রম জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলকে চিঠির মাধ্যমে লিখিতভাবে অবহিত করা হতো।
আমি তখন ছোট ছিলাম। ১৯৯৮ সালে বড় ওয়ানে পড়তাম। 'বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি' ঝিনাইদহ জেলা শাখায় যুক্ত হন আমার বাবা। নিয়মিত সঞ্চয় জমা করা হয়। আমাদের কানাইডাঙ্গা গ্রামের প্রত্যেক পরিবার থেকে কমপক্ষে ১/২ জন সদস্য এই সমিতিতে যুক্ত হয়। আমাদের পরিবারের ৬ জন সদস্যই যুক্ত হই। আমার নামের 'সঞ্চয়ী পাস বই'টা প্রতিদিন কয়েকবার করে মেলে ধরতাম- পাতা উল্টিয়ে দেখতাম। কারণ, আমার নামেই সবচেয়ে বেশি টাকা জমা করেছিলেন আব্বা। তখন হিসাবগুলো বুঝতাম না। ১৯৯৯-এ ক্লাস টু'তে উঠলাম। তখন বেশ বুঝতে পারতাম। না বুঝলে অবশ্য মেজো ভাইকে জিজ্ঞেস করতাম- তিনি বুঝিয়ে দিতেন। মেরুন কালারের পাঞ্জাবি পরা দাড়িওয়ালা একজন লোক সঞ্চয়ের টাকা নিতে আসতেন (তার নাম আব্দুল হাকিম)। তখন আব্বার সাথে আব্দুল আওয়াল মামাও উপস্থিত থাকতেন। আব্দুল আউয়াল মামা এবং আব্দুল হাই মামা ঐ সময়ের সম্পূর্ণ ঘটনা জানেন। তাছাড়া আমাদের গ্রামের অনেকেই এই ঘটনা বিস্তারিত জানেন।
নির্দিষ্ট মেয়াদে সঞ্চয়ের টাকা জমা দেয়া হয়ে গেল। নির্দিষ্ট সময় পর সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পেতে অফিসে যোগাযোগ করা হলে টাকা দিবে বলে ঘোরাতে লাগলো। ঝিনাইদহের হাটের রাস্তায় ছিল 'বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি ঝিনাইদহ জেলা শাখা'র প্রধান কার্যালয়। অনেক ঘোরাঘুরির পরেও যখন তারা টাকা দিলো না তখন 'জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ঝিনাইদহ জেলা শাখা'য় অভিযোগ জানানো হয়। আমাদের পরিবারের সঞ্চয়ের টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০,০০০(আশি হাজার টাকা)। গ্রামের সকল গ্রাহকের টাকাসহ মোট টাকার পরিমাণ আড়াই লক্ষের (২৫০০০০+) উপরে। 'জামায়াতে ইসলামী' সংগঠন থেকে মাত্র ১৫০০ (এক হাজার পাঁচশত) টাকা প্রদান করে সান্তনা দেওয়া হয়। আর গ্রামের যারা সঞ্চয়ের টাকা পেতেন তাদের টাকা পরিশোধ করেছিলেন আমার আব্বা। আব্বা আর মেজো ভাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাইস মিল চালিয়ে ধান ভানার মাধ্যমে তাদের টাকা পরিশোধ করেছিলেন। গ্রামে আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই সেই টাকা নেননি এখনও; যেমন -মোড়ল নানাদের পরিবার।
এই হল 'বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি' যার পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
এখন আমি যদি আমার বাপের সঞ্চয়ের টাকা চুরি করা বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতির সেইসব জামায়াত নেতৃবৃন্দের ছবি দেখতে চাই, তাহলে কি আমার পাপ হবে? থুক্কু, মহাপাপ হবে?
হ্যাঁ। জামায়াতের লোকদের দৃষ্টিতে এটা পাপ তো বটেই, মহাপাপও। এজন্য আমার গিরা-গাট্টা কিছু থাকবে না (তাদের বক্তব্য অনুযায়ী)।