হক সমাচার -১
এ এস এম মোজাম্মেল হক। সাবেক সাংসদ, সংসদীয় আসন-৮৩, ঝিনাইদহ-৩; দল: জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ (বর্তমান নাম: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি)। ত্রিশোর্ধ প্রায় সকলেই তাকে চিনেন। বৃহত্তর যশোরের বয়স্কদের সকলেই তাকে চিনেন। সম্পর্কে তিনি আমার নানা, অর্থাৎ আমার মায়ের পিতা এবং আমার বাবার শশুর।
আমার বাবা আমার দাদা থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে সে টাকা আমার বাবা তার শ্বশুরের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এজন্য যে তিনি যেন এখানে অর্থাৎ নানার গ্রামে জমি ক্রয় করে দেন। কিন্তু তিনি তার জামাতাকে কোন জমি ক্রয় করে দেননি এবং সেই টাকাগুলোও ফেরত দেননি।
একদিন বারান্দায় বসে বিভিন্ন ধরনের গল্প হচ্ছিল। আব্দুল কাদের চাচা একটা ঘটনা বলছিলেন। ঘটনাটি সামন্তা এলাকার আলতাফ ডাক্তারকে নিয়ে। আলতাফ ডাক্তারের এলাকার কিছু লোক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলো আমার চাচার এলাকায়। তারা কথাবার্তার মধ্যে এক সময় বলছিল যে তাদের এলাকায় অর্থাৎ সামন্তা এলাকায় একজন ভালো মানুষ ছিল। অনেক বছর পর তার কবর ভেঙে গেলে দেখা যায় যে তার লাশটি অক্ষত রয়েছে। তিনি হলেন আলতাফ ডাক্তার। তখন চাচা বলে উঠলেন তার লাশ অক্ষত থাকতেই পারে না। কারন সে আমাদের ৩৫ বিঘা জমি বিক্রি করা টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। সুতরাং তার লাশ অক্ষত থাকতেই পারে না। যদি অক্ষত থাকে তাহলে সে নিশ্চিত ফেরাউন। এ কথাগুলো শোনার সময় আমি আমার বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বাবা নির্বিকারভাবে এক দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন। মায়ের চাহনি দেখে আমার কিছুটা সন্দেহ হল। আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঘটনাটা সত্য কিনা। তিনি কোন কিছুই বললেন না। পরে মাকে জিজ্ঞাসা করলাম। মা বললেন, "তোর চাচা পরের ঘটনাগুলো জানে না। মা বললেন যে, আলতাফ ডাক্তার পুরো টাকা ফেরত দিয়েছিল তোর বাপের হাতে। তোর বাপ সেই টাকা তোর নানাকে দিয়েছিল আমার নিষেধ সত্ত্বেও। তোর নানা সেই টাকা আর ফেরত দেননি।" শশুরের সম্মান বাঁচাতে সত্য প্রকাশে নীরব থেকে একজন নিরপরাধ মানুষকে দোষী বানানো অন্যায়। আমার চাচা না জানার কারণে আলতাফ ডাক্তার সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন তা একদমই সঠিক নয়। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
পরবর্তীতে আমার বাবা তার গ্রামের সম্পত্তি বিক্রি করে কানাইডাঙ্গাতে বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন। গওহর মোল্লা নানার কাছ থেকে আমার বাবা জমি কিনেছিলেন। সেই জমি আমার নানা অর্থাৎ আমার পিতার শশুর বিক্রি করে খেয়েছিলেন। যাদের কাছে বিক্রি করেছিলেন তারা যখন জমির দখল নিতে আসে, আমার বাবা বলেছিলেন আমার জমি তোমরা কেন দখল নিতে এসেছ। তখন তারা বলেছিল আপনার শ্বশুরের কাছ থেকে এই জমি আমরা কিনে নিয়েছি। শশুরের সম্মান বাঁচাতে সেই জমি তাদেরকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন আমার বাবা। পুরান পাড়ার মাঠে আরো কিছু জমি ছিল। সেগুলোও আমার নানা বিক্রি করে খেয়েছিলেন হাফেজ বদিউজ্জামান নানার কাছে। কামরুজ্জামান মামা যখন মসজিদে জমির বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার কথা বলেছিল তখন আমার বাবা তার শ্বশুরের সম্মান বাঁচাতে সেই জমি তাদেরকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন। আমার পিতার টাকায় কেনা বড় পুুকুরটি আমার পিতার নামে রেজিস্ট্রি করার পরিবর্তে তারা রেজিস্ট্রি করেছিল আমার নানির নামে। সেটিও তারা আত্মসাৎ করে। পরবর্তীতে নানি যখন বড় পুকুরটি আমার বাপের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে সম্মত হয় তখন আবুল হাসেম খালু ছিলেন প্রধান অন্তরায়। তিনি ফতোয়া দিয়েছিলেন পুকুরের জমি লিখে না দেওয়ার জন্য। এই ধরনের বে-ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারীদের কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করা বৈধ হবে কি না আলিমগণ ভালো বলতে পারবেন। সকল বে-ইনসাফকারীদের বিচার একদিন হবেই, ইনশাআল্লাহ।
পুকুরের মধ্যে আমাদের বাড়ির জমিটুকু পুনরায় পুনরায় কিনে নিতে হয়েছিল। ওই জমির জন্য দুই দুই বার করে দাম পরিশোধ করা হয়েছিল, তারপরে সম্পদ আত্মসাৎকারী শ্বশুর তার জামাতাকে ওই জমিটুকু রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন। আমার নানার কাছ থেকে ২ বিঘা জমি কিনেছিলেন আমার বাবা। ছোটবেলা থেকে জানি আমাদের দুই বিঘা জমি আছে। এখন জানি সেই জমি পরবর্তীতে এক বিঘা চার কাঠা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে, বাকিটুকু দেয়নি। নানার বাড়ীর পুকুর কাটা হয়েছিল আমার পিতার টাকায়। আরো যে কত ঘটনা আছে, আমার বাবা-মা যদি বলতেন তাহলে জানতে পারতাম।
বাপ-দাদার সম্পত্তির ফারায়েজ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অবিচার আমাদের দেশে ডাল ভাতের মত। কিন্তু একজন শ্বশুর কর্তৃক জামাতার সম্পত্তি আত্মসাতের এমন জঘন্য নজির সত্যিই বিরল।
এ এস এম মোজাম্মেল হক তো সেই ব্যক্তি যিনি তার লোকজনকে দিয়ে শ্বশুরের ঘাড়ে কোপ দিয়েছিলেন। এ এস এম মোজাম্মেল হক তো সেই ব্যক্তি যিনি তার জামাতার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন।